Wednesday 27 February 2013

আমার শহীদ মিনার ভাঙ্গার অধিকার আমি কাউকে দেই নাই, আমার পতাকা অমর্যাদার অধিকার আমি কাউকে দেই নাই!

"দেশ, কাল ও শান্তির কথা ভেবে রয়েছি আমরা নীরব
যখন নীরবতা ওরা দুর্বলতা ভাবে রক্ত করে টগবগ"

রক্ত ফুটছে... এই খবরগুলো দেখে...

নাস্তিকতা আস্তিকতা যার যার ব্যাপার, ধর্মে কোথাও গায়ের জোরে কিছু করার কথা বলা হয়নি। শাহবাগ আন্দোলনের সাথে আস্তিকতা-নাস্তিকতা কেন জড়ানো হচ্ছে বুঝলাম না। এ আন্দোলন তো কোন ধর্মের বিপক্ষে নয়, বরং ধর্মকে যারা নিজেদের সুবিধায় ব্যবহার করে আসছে তাদের বিপক্ষে। ঠিক এই মুহূর্তে যেমন আন্দোলনকারীদের ইসলামের বিপক্ষে বা নাস্তিকতার লেবাস দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সুবিধাবাদী আচরণ এটাকে বলে। যেখানে সবাই জানে এই আন্দোলনের সূত্রপাত কিভাবে হয়েছে - কসাই কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় না হওয়ায় কিভাবে ক্ষোভের তীব্রতায় ফুঁসে উঠেছে দেশ এবং কিভাবে ধর্ম-বর্ণ, দল-মত সব ভেদাভেদ ভুলে নানা শ্রেনীর মানুষ নরপশুগুলোর ফাঁসির দাবিতে তরুণদের সাথে একাত্নতা প্রকাশ করেছে। রাজাকারের ফাঁসি ও জামাত শিবিরের মতো ধর্মভিত্তিক সুবিধাবাদী দলকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে ১৭ দিন আন্দোলন চলেছে, হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছে, কিন্তু কোথাও তো কোন বিশৃঙ্খলা হয়নি, আগুন জ্বলেনি, আতংক সৃষ্টি হয়নি। গায়ের জোরে ঘটনা ঘটানো হচ্ছে এখন, তার কারণটাও স্পষ্ট - ধর্মান্ধরা ওই একটা পন্থাই জানে।

'নাস্তিক' 'নাস্তিক' করে গলা ফাটিয়ে এই জামাত-শিবির নামের ধর্মান্ধ সুবিধাবাদী গোষ্ঠী আসলে কি বোঝাতে চাচ্ছে সেটা স্পষ্ট না। এভাবে ফাঁকা ঢিল ছুড়ে তারা আসলে কাকে আঘাত করতে চাচ্ছে? দাবি যদি ন্যায্য হয় এবং সেটা পূরণও যদি আবশ্যকীয় হয়, আর সে দাবির সাথে যদি দেশের অধিকাংশ মানুষ এক হয়, তখন আর সেটা কারো একার দাবি থাকে না, পরিণত হয় গণদাবীতে। তারপর সেটা করিম করলো না রহিম করল তা কোনো গুরুত্বপূর্ন বিষয় না। এখানে 'ইহুদী-নাছারা', 'নাস্তিক-আস্তিক' এসব শব্দ ব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা অর্থহীন। কথায় কথায় পবিত্র গ্রন্থ, নবী-রাসূলের নাম ব্যবহার করে তারা মূলত নিজেরাই নিজের অনুভূতিকে সস্তা বস্তুতে পরিণত করছে, অন্য কেউ নয়। "জাত গেলো জাত গেলো বলে, একী আজব কারখানা"... এতো অল্পতে যারা নিজের জাত কুল রক্ষায় দিগজ্ঞানহীন উন্মাদ হয়ে পড়ে, তাদের মূলত গোড়ায় গলদ আছে, তাদের ঈমান প্রশ্নবিদ্ধ। তাদেরকে বলছি - দয়া করে আপনারা ধর্ম-কে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করা বন্ধ করুন, প্লিজ! মানুষ ভালমন্দের তফাৎ করা জানে, সেটা মানুষের উপর ছেড়ে দিন। হুদা গেঞ্জাম সৃষ্টিকারীদের তো আল্লাহ্‌ও পছন্দ করে না।

যেমন মিথ্যাকে হাজারটা ফেক ছবি, ফটোশপ দিয়েও প্রতিষ্ঠা করা যায় না। তেমনি সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে মিথ্যার তকমার প্রয়োজন হয়না। পতিতা, গাঁজাখোর... শাহবাগ ওপেন সেক্স এলাকা, সেখানে ধর্ষণ হচ্ছে... এসব বলে কি আদতে আন্দোলনকারীদের কোন ক্ষতি করা গেছে না তাদের মনের জোর কমানো গেছে, বরং উল্টা নিজেদেরকেই সাধারণ মানুষের কাছে ধর্মবেশ্যায় পরিণত করেছেন আপনারা।

যেই শহীদমিনারে আমরা ছোটবেলা থেকে বাবা, চাচাদের হাত ধরে গিয়েছি, সন্মান ভরে স্মরণ করেছি সেই বীরযোদ্ধাদের যাদের আত্নবলিদানে আজকে আমরা প্রাণ ভরে মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারি, মনের কথা লিখতে পারি। পুরো বিশ্ব যে শহীদদের সম্মান দিয়ে ২১ ফেরুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে গ্রহণ করেছে। অথচ এদেশে থেকেও, এ বাংলা ভাষায় কথা বলেও কোন সাহস বলে আপনারা এই স্বাধীন দেশের শহীদ মিনারের গায়ে হাত দেন?!

আমার ছয় বছরের ছোট্ট ছেলেটাও জানে নিজ দেশের পতাকাকে কেমন করে ভালোবাসতে হয়, স্কুলের অ্যানুয়াল ফাংশনে সে নিজ হাতে জাতীয় পতাকা আঁকে, টিভি বা কম্পিউটারে কোথাও পতাকা দেখলে আনন্দে চিৎকার করে ওঠে - "মা দেখো বাংলাদেশ"! অথচ সে জন্মের পর থেকেই আছে দেশের বাইরে। আর আপনারা কোন ধর্মগুরু, কোন কেতাবের দীক্ষায় যে দেশে আলো বাতাসে শ্বাস নেন, যে পতাকার তলে বেঁচে থাকেন, ছত্রাকের মত বংশবিস্তার করেন, সে পতাকাকে অমর্যাদা করার সাহস পান?! ছিঃ

ধর্মান্ধদের কাছে আমার প্রশ্নঃ কেন নাস্তিকতার অজুহাতে কাউকে নির্মমভাবে চোরা/গুপ্ত হত্যা করা হবে? কেন শহীদমিনারের মত বাঙ্গালীর আত্নঅনুভূতির কেন্দ্রে আঘাত করা হবে? কেন অহিংস কোনো আন্দোলনে সহিংস অস্ত্রধারী পান্ডারা আক্রমন করবে? যে দেশে বাস করছেন সেদেশের পতাকার প্রতি কেন সামান্যতম সম্মানবোধ আপনাদের জন্মালো না? কোন ধর্মে মানুষকে নিজ দেশের জাতীয় পতাকাকে অসম্মান করতে শেখায়? কোন ধর্মে এই পাশবিকতার দীক্ষা দেয়া হয়?


ছবিসূত্র
 
এরা ধর্মাদ্ধ, মানুষ নয়!

স্বাধীনতার চার দশক পরেও যারা একটি স্বাধীন দেশের পতাকা পুড়াতে পারে, শহীদ মিনার ভাঙতে পারে, তারা সেই দেশের জন্য কতটা পুষে রাখা কালসাপ! প্রকাশ্যে এ জঘন্য রাষ্ট্রদ্রোহীতার সামিল অপরাধ করেও কি তারা পার পেয়ে যাবে? যে দল একটি দেশের সার্বভৌমত্বের জন্যে স্পষ্টই হুমকি তা কেন নিষিদ্ধ করা হবে না? শুধু নিষিদ্ধই নয় বাংলাদেশের আইনানুযায়ী এধরণের রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধের যে শাস্তি, তাও তাদের দিতে হবে, দ্রুত! এ পতাকা কোন সস্তায় পাওয়া বস্তু নয়, এর সাথে যাচ্ছেতাই করার অধিকার কাউকে দেয়া হয় নাই!

আমার শহীদ মিনার ভাঙ্গার অধিকার আমি কাউকে দেই নাই, আমার পতাকা অমর্যাদার অধিকার আমি কাউকে দেই নাই!


জয় বাংলা!

No comments:

Post a Comment